বাল্যবিবাহ একটি সামাজিক ব্যাধি। এই ব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে প্রশাসন সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তার মধ্য দিয়েও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলছে বাল্যবিবাহ।
অতি প্রচীন কাল থেকেই সব ধর্ম ও গোত্রের মাঝে অতি মাত্রায় বাল্য বিবাহের প্রচলন ছিলো । কালের বিবর্তনে নানা কুসংস্কার ও অপসংস্কৃতি দুর করে বাল্য বিবাহ রোধ করা কিছুটা সম্ভব হলেও এটা এখনো সমাজ থেকে বিলুপ্ত হয় নাই ।
বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মমতাময়ী মাতা শেখ হাসিনার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহনের ফলে বাল্য বিবাহ অনেকটা রোধ হলেও দিঘলিয়া উপজেলায় প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলছে বাল্য বিবাহ। আর এই প্রবণতা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। সম্প্রতি খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বাল্য বিবাহের প্রবনতা বেড়েই চলেছে। প্রাচীন যুগের ঐতিহ্য বাল্য বিবাহের প্রথা এখনো সমাজে বিদ্যমান। বাল্যবিবাহ বন্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে, এর ভিতর দিয়েও সমাজের একশ্রেণীর ব্যক্তিদের সমর্থনে এবং সহযোগিতায় গোপনে গোপনে নাবালক নাবালিকাদের মধ্যে বিবাহ কার্য সম্পন্ন করা হচ্ছে। সরে জমিন অনুসন্ধানে এর সত্যতাও পাওয়া যায়।
প্রাপ্ত তথ্যে সরকারি হিসাব অনুযায়ী দিঘলিয়া উপজেলায় মার্চ মাসে ৩টি, মে মাসে ১টি এবং জুন মাসে ১টি বাল্যবিবাহ সম্পাদিত হয়েছে । এর থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে, প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে প্রতিনিয়তই ঘটছে এরকম বাল্যবিবাহের ঘটনা।
মাঝে মধ্যে দেখা যায়,গরীব অসহায় পিতা-মাতার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া নাবালিকাদের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার ঘৃণ্য ঘটনা ঘটছে। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা এবং উপজেলা তথ্য কর্মকর্তা মানুষের ডোর টু ডোর গিয়ে এবং উঠান বৈঠকের মাধ্যমে অব্যাহতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এতদ সত্বেও প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে অহরহ বাল্য বিবাহ সংঘটিত হচ্ছে বলে জানা যায়।
এই অপরাধ মূলক বাল্য বিবাহের বিষয়ে খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম গুলোতে গোপনে ঘুরে জানা যায় , বাল্য বিবাহ বন্ধের জন্য সরকারিভাবে লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে সচেতন করেছেন এবং উঠান বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
এক সমীক্ষায় দেখা যায় , গরীব পিতা মাতার পঞ্চম শ্রেনীতে পড়ুয়া থেকে অষ্ঠম শ্রেনীতে পড়ুয়া নাবালিকা কন্যাকে নিজ গ্রাম থেকে দুরে অন্য কোন গ্রামের আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে বিবাহ দেয়া হচ্ছে।আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কঠোর হস্তক্ষেপ গ্রহন করা সত্বে ও আনাচে কানাচে , বনজঙ্গল , পানের বরাজে ও বাঁশ বাগানে এমন কি নৌকা যোগে নদী বা বিশাল বিলের মাঝ খানে নিয়ে গিয়ে পাত্র পাত্রীর আত্মীয় স্বজনের সহযোগীতায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করানো হয়।
নাবালক-নাবালিকাদের বাল্য বিবাহ দিয়ে দেশ, জাতি ও সমাজের ক্ষতি সাধন করছে এক শ্রেনীর কুচক্রী মহল। এযেন শুভঙ্করের ফাঁকি । এই ফাঁকি দিতে গিয়ে নাবালক নাবালিকাদের কাঁধে তুলে দিচ্ছে সংসারের বোঝা। আর এরই ফলে মাতৃ মৃত্যু ও শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে অহরহ । বাল্যবিবাহের এই ধারা অব্যাহত থাকলে সমাজ থেকে এই ব্যাধি দূর করা অত্যন্ত কঠিন হবে বলে মনে করেন বিজ্ঞজনেরা। তারা মনে করেন, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে জনসচেতনতার কোন বিকল্প নেই। নাবালক নাবালিকা শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি করা আবশ্যক। এজন্য স্কুল গুলিতে বেশি বেশি সচেতনতা মূলক সভা সমাবেশের আয়োজন করা প্রয়োজন। অপরদিকে অভিভাবকদেরও সচেতন করে তুলতে হবে বলেও বিজ্ঞজনেরা মনে করেন।
বাল্যবিবাহ একটি সামাজিক ব্যাধি এই ব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে প্রশাসনের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করেন দিঘলিয়ার সচেতন মহল।