খুলনার দিঘলিয়ায় কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে জমজমাট হয়ে উঠেছে পশুর হাট। আসন্ন ঈদ-উল- আজাহার বাকী আছে আর মাত্র ২ দিন। ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে পুরোদমে বেচাকেনা। তবে দাম নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। ক্রেতারা বলছেন পশুর দাম তুলনামূলকভাবে বেশি চাওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন গো খাদ্যের দাম তুলনামূলকভাবে বেড়ে যাওয়ায় পশুর দামও কিছুটা বেড়েছে।
শনিবার ১৫ জুন এলাকার কয়েকটি হাট ঘুরে দেখা গেছে ক্রেতা বিক্রেতাদের সমাগমে পশুর হাট গুলি সরগরম হয়ে উঠেছে। কোরবানি উপলক্ষে এ হাট গুলি দু-তিন দিন পূর্বেই উদ্বোধন হয়েছে। তবে দিন যত ঘনিয়ে আসছে বেচাকেনাও তত জমে উঠছে বলে জানান ক্রেতা বিক্রেতারা। বিক্রেতারা বলছেন, এবার প্রতিটি খামারেই অনেক গরু ছাগল রয়েছে। তাদের ধারণা চাহিদার চেয়ে এবার পশুর সংখ্যা বেশি। তাই এবার কোরবানির পশুর কোন সংকট হবে না। তবে খাদ্যের দাম বাড়াতে গরু ছাগল লালন পালনে খরচ বেড়েছে। এতে গত বছরের চেয়ে এবার পশুর দাম তুলনামূলক কিছুটা বেশি হতে পারে। হাটে যথেষ্ট পরিমাণ ক্রেতার আগমন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এতে মনে হয় এবার ক্রয়-বিক্রয় ভালো হবে।
দিঘলিয়ার পথের বাজার পশুর হাট, কেটলা পশুর হাট এবং দিঘলিয়া ওয়াই এম এ ক্লাবের পশুর হাটসহ বিভিন্ন হাট ঘুরে দেখা যায় জমজমাট পরিবেশ। হাটে সারি সারি বাঁশের খুঁটিতে বাঁধা রয়েছে হাজারো কোরবানির পশু। গরু-ছাগলের দরদাম নিয়ে হাঁকডাক করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। সারিবদ্ধভাবে রাখা কোরবানির পশুগুলো দেখতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। বিক্রয়ের জন্য হাটে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন আকৃতির গরু, ছাগল আনা হয়েছে। গরুর চাহিদার বিষয়ে বিক্রেতারা জানান, ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বেশি। বড় গরুর বিষয়ে তাদের ভাষ্য- প্রতি বছরই এমনটা হয়। ছোট ও মাঝারি গরু বেশি বিক্রি হলেও বড় গরুর চাহিদা কম থাকে। গরু ছাড়াও উপজেলার এসব স্থায়ী অস্থায়ী পশুর হাটে খাসি ছাগলও বেশ আমদানি হয়েছে। এগুলোর দাম জানতে চাইলে দাম নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বিক্রেতারা জানান, তাদের মধ্যে অনেকেই ব্যাংক থেকে ঋণ ও ধারদেনা করে খামারে গরু ছাগল পালন করেছেন। ফলে কাঙ্খিত দামে বিক্রি করতে না পারলে তাদের ঋণের বোঝা বইতে হবে।
একজন পাইকার জানান, গত বছরে যে গরুর দাম ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা ছিল এ বছর সেই গরুর দাম ৯০ থেকে ১লাখ টাকা। এভাবে গরুর আকার অনুযায়ী দামেও তফাত রয়েছে। বিক্রেতারা বলেন, সরকারের সদিচ্ছায় যেহেতু এবার পশুর হাটে ইন্ডিয়ান পশু আসতে পারে নাই তাই এবার পশুর দামও আমরা ভালো পাব বলে আশা করি। এ অবস্থায় ক্রেতার আগমন এবং তাদের চাহিদা বুঝে গরু ছাগলের দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার ফজলুল করিম বলেন, এবার দিঘলিয়া উপজেলায় গরু ছাগল রয়েছে চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি। তিনি বলেন,চলতি বছর এ উপজেলায় কোরবানির জন্য চাহিদা রয়েছে প্রায় ৪ হাজার পশুর আর প্রস্তুত করেছেন ৫ হাজার ৫৫১টি পশু। যা চাহিদার চেয়ে ১ হাজার ৫৫১ টি বেশি। দিঘলিয়া উপজেলায় কোরবানির জন্য যে পরিমাণ পশু রয়েছে তাতে চাহিদা মিটিয়ে আরো ১ হাজার ৫৫১টি পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। তাই এবার উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন অঞ্চলে দিঘলিয়ার খামারিদের প্রস্তুত করা পশু সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
হাটে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও লাইটিং এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদিকে দুর্বৃত্তরা জাল টাকা ছড়িয়ে দিয়ে যেন সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করতে না পারে সে জন্য হাট কমিটির লোকজন ও পুলিশ তৎপর রয়েছে বলেও জানা যায়। হাটে আসা পাইকারদের থাকা খাওয়ার সুব্যবস্থাসহ পুলিশ প্রশাসন ও ভলান্টিয়ারের মাধ্যমে শতভাগ নিরাপত্তার নিশ্চয়তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।