প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয়। তাদের সুশিক্ষার মাধ্যমে সুযোগ্য করে গড়ে তুলতে পারলে তারা হতে পারে সমাজের সম্পদ। এ বিষয়টির উপরে গুরুত্ব আরোপ করে বাংলাদেশে পরিচালিত হচ্ছে চারটি পিএইচটি সেন্টার বা শারীরিক প্রতিবন্ধী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এই চারটি সেন্টারের একটি খুলনা মহানগরের গোয়ালখালীতে অবস্থিত। শারীরিক প্রতিবন্ধীদের বিশেষ করে বাক- শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে এ প্রতিষ্ঠানটি। বুধবার ৩ সেপ্টেম্বর প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের জন্য খুলনার পিএইচটি সেন্টার, গোয়ালখালী, খুলনা পরিদর্শন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সরকারি মহসিন কলেজের সমন্বয়ক মোঃ শেখ শাহিন, মোঃ আকিব হোসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী তানজীম তিমাসহ খুলনার অতি সুপরিচিত সেচ্ছাসেবক বটগাছ খ্যাতিসম্পন্ন সৈয়দ শাহজাহানসহ আরো কিছু ছাত্র-ছাত্রী। এ সময় তারা পিএইচটি সেন্টারের সকল প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে শুকনা খাবার বিস্কিট, চকলেট, কেক ইত্যাদি বিতরণ করেন।
পরিদর্শনকালে পিএইচটি সেন্টার এর কর্তৃপক্ষ তাদের জানান, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে থাকা পিএইচটি সেন্টার, গোয়ালখালী, খুলনা নিভৃতে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের সমাজের সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানটি সর্বপ্রথম খুলনা শহরে মৌলভী পাড়ায় একটি ভাড়া বাড়ীতে ৪ মে ১৯৬২ ইং সনে দৃষ্টি ও বাক-শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের সমাজের সম্পদ হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু করে। ১৯৬৩ ইং সনে বহুল প্রচারনার পর জানুয়ারী মাসে ৯ জন বাক-শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ভর্তির মাধ্যমে কার্যক্রমের যাত্রা শুরু করে। জমি অধিগ্রহণ পূর্বক অত্র প্রতিষ্ঠান তৈরী করা হয় ১৯৬৪ সনে। তখন অত্র প্রতিষ্ঠানের জমির পরিমাণ ছিলো ৪.৪০ একর। ১৯৬৪ ইং সন থেকে বাক-শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পৃথক ২টি বিদ্যালয় ও ৪টি কারিগরী শাখা চালু করা হয়। পরবর্তীতে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য বাঁশ ও বেতের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ চালু করা হয়।
একই বছরে ৩০ জন বাক-শ্রবণ প্রতিবন্ধী ও ৩০ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছাত্রদের জন্য ২টি দ্বিতল ছাত্রাবাস ভবন নির্মিত হয়। ১৯৮৩ ইং সনে ২০ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছাত্রীর জন্য দ্বিতল ছাত্রী নিবাস নির্মিত হয়। বর্তমানে ৯৭ জন দৃষ্টি ও বাক-শ্রবণ প্রতিবন্ধী আবাসিক সুবিধা ভোগ করছে। প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও পূনর্বাসনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রটি উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। ২০১০ শিক্ষাবর্ষ থেকে বাক-শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের কল্যাণার্থে বিদ্যালয়টিকে ৬ষ্ঠ শ্রেণী হতে ৮ম ও পরবর্তীতে এসএসসি পর্যন্ত উন্নীত করা হয়েছে। বর্তমানে বাক-শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী প্রাথমিকে ৪০ মাধ্যমিকে ৩৮ ও উচ্চ মাধ্যমিকে ৩ জন সর্বমোট ৮১ জন ছাত্র-ছাত্রী ১ম থেকে একাদশ শ্রেণী পর্যন্ত আবাসিক সুবিধাসহ লেখা-পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। বাক-শ্রবণ প্রতিবন্ধী বালিকাদের জন্য তিনতলা বিশিষ্ট আবাসিক ১ টি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির সফলতা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের সহকারী পরিচালক (তত্ত্বাবধায়ক) মোঃ আবিদ হাসান জানান, পূর্বের অনেক সাফল্যের গাঁথা। তিনি বলেন, “প্রতিবন্ধীদের জন্য যুগোপযোগী ও মানসম্মত ট্রেড চালু করা প্রয়োজন কর্মমুখী শিক্ষা প্রদানের জন্য সেলাই ট্রেডটি আধুনিকায়ন করে গার্মেন্টস শিল্পে কাজ করার উপযোগী দক্ষ জনশক্তি করে গড়ে তোলা এবং তথ্য প্রযুক্তির যুগে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অটোক্যাড, অটোমেশন, গ্রাফিক্সসহ বিভিন্ন প্রোগ্রামে প্রশিক্ষণ দান করে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদেরকেও মানসম্মত দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করা সম্ভব। পিএইচটি সেন্টারের তত্ত্বাবধায়ক বলেন, এই সেন্টার থেকে পাশকৃত ছাত্র-ছাত্রীদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে এবং পুনর্বাসিত হয়েছে। ঐ সকল প্রতিষ্ঠানে তারা দক্ষতা এবং সুযোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে কর্ম সম্পাদনে নিয়োজিত আছে।
প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান সমস্যা এবং সমস্যা সমাধানের উপায় সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির সহকারী পরিচালক মোঃ আবিদ হাসান জানান, প্রতিষ্ঠানটির দক্ষিণ ও পশ্চিম পাশে দেওয়াল তৈরির প্রয়োজনীয়তা, আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য নতুনভাবে হোস্টেল তৈরির প্রয়োজনীয়তা, শিক্ষা এবং হোস্টেল সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য নতুন স্টাফ নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা এবং কারিগরি শাখার যুগোপযোগী ট্রেডগুলো চালু করার প্রয়োজনীয়তা আছে বলে তিনি মনে করেন।
প্রতিষ্ঠানটি তার চলমান গতিতে এগিয়ে গেলে সমাজের প্রতিবন্ধীরা নিজেদের সমাজের বোঝা নয় বরং সমাজের অংশ ভাবতে শুরু করবে পাশাপাশি প্রতিবন্ধীরা সমাজের সম্পদে পরিণত হবে বলে মনে করেন বিজ্ঞজনেরা।