দেশে তীব্র তাপদাহের কারণে চলছে রেড এলার্ট। আর এদিকে সরকারি খাস জায়গার হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার পুকুরিয়া চন্দ্রপুর পাহাড়ের (১৪ নম্বর মাঠ সংলগ্ন) পুকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আসহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে।
পরিবেশবিদরা এহেন অবস্থায় বৃক্ষরোপনের পরামর্শ দিলেও চেয়ারম্যানের ভয়াবহ বৃক্ষনিধন নিয়ে উদ্বিগ্ন সচেতন মহল। চেয়ারম্যানের প্রকাশ্যে এই গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে এলাকায় হইচই থামাতে বন বিভাগ লোক দেখানো মাত্র ২০০টি গাছের টুকরা জব্দ দেখিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) বিকালে ঘটনাস্থল ঘুরে দেখা গেছে, এক হাজারের অধিক কাটা গাছ প্রায় ১২ একর (৩৬ বিঘা) সরকারি খাস জায়গায় কাটা গাছের গোড়া পড়ে আছে। সারি সারি নিধনকৃত বৃক্ষ দেখে মনে হয় ভয়াল তান্ডবের একটি চিত্র। এভাবে কাটা গাছের দৃশ্য দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্থানীয় চেয়ারম্যান তিনদিন ধরে এ গাছগুলো কাটেন। বনবিভাগের পুকুরিয়া বিট কর্মকর্তা আশরাফুল পুকুরিয়া চন্দ্রপুর পাহাড়ে গিয়ে পুকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আসহাব উদ্দিনের সাথে বৈঠক করে তার কথামতো সহস্রাধিক কাটা গাছ জব্দ না দেখিয়ে মাত্র ২০০ টুকরা গাছ স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মুনিরুল মান্নান চৌধুরীর কাছে জিম্মায় দিয়েছেন। এ ব্যাপারে বন বিট কর্মকর্তা আশরাফ বলেন, কাটা গাছ গোনার সময় পাইনি; তাই অনুমান করে এ তথ্য দিয়েছি।
ইউপি সদস্য মুনিরুল মান্নান চৌধুরী বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাওয়া রামদাস হাঁট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক তপন কুমার বাগচী বলেন, বন কর্মকর্তাদের উচিত ছিল গাছগুলো গুনে জব্দ করা।
❝সবকিছু পুলিশের দোষ খুঁজে মানুষ। অথচ বন কর্মকর্তারা অনুমান নির্ভর করে গাছের জব্দ তালিকা তৈরী করেছে।❞
বাঁশখালীর বনবিভাগের কালীপুর রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন বলেন, জায়গাটি সরকারি খাস জায়গা বনবিভাগের নয়। তারপরও গাছ কাটার ব্যাপারে অনুমতি না নেয়ায় মামলা দায়ের করা হবে। সরকারের খাস জায়গা তাই স্থানীয় ভূমি অফিস মামলা করতে পারে। পুকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিজের লিজ নেয়া জায়গা বলে দাবি করতেছে। প্রকৃত ঘটনা কী তা তদন্ত করা হবে। সহস্রাধিক গাছ কাটার পরও বনবিট কর্মকর্তা মাত্র ২০০ টুকরা গাছ জব্দ দেখানোর ব্যাপারে বলেন, তাও তদন্ত করা হবে। তিনি আরও বলেন, যাই হোক এই বৈশ্বিক উষ্ণতার সময় চেয়ারম্যান এতগুলো গাছ কেটে ঠিক করেননি বলেও তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
পুকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আসহাব উদ্দিন বলেন, জায়গাটি আমার লিজ নেয়া জায়গা। প্রত্যেকটি গাছ কাটার অনুমতি নেয়া হয়েছে। তিনি প্রথমে
৫০০টি গাছ কেটেছেন স্বীকার করলেও পরে বনবিট কর্মকর্তার কারচুপি মতে জব্দ তালিকা অনুসারে বলেন “৫০০টি নয়, ২০০টি কেটেছি” বলে স্বীকার করেছেন। সেখানে সহস্রাধিক গাছ কাটার দৃশ্যমান রয়েছে, আর আপনি ৫০০/২০০টি বলার কারণ কি? এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, “আমার গাছ আমি কাটবো, প্রশাসনের অনুমতি নেব কী নেব না, তা আমার মাথা ব্যাথা। অন্যদের কেন হবে?” বলে তিনি উল্টো প্রশ্ন করেন।
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার বলেন, গাছ কাটার ব্যাপারে চেয়ারাম্যানকে কোন ধরণের অনুমতি দেয়া হয়নি। এ বিষয়ে দ্রুতই তদন্তপূর্বক দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। একই সাথে পরিবেশ রক্ষায় যা করণীয় তা করা হবে।