ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)’র উদ্যোগে দীর্ঘ তিনযুগের সামাজিক বিরোধ নিষ্পত্তির অঙ্গিকারের মধ্যদিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার শান্তিপ্রিয় নাগরিকদের মধ্যে বইতে শুরু করেছে স্বতির সুবাতাস।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়,হরিনাকুণ্ডু উপজেলার ফলসী ইউনিয়নের কুলবাড়িয়া গ্রামে বর্তমান চেয়ারম্যান অ্যাড. বজলুর রহমান ও সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুর রহমানসহ তাদের পূর্ববর্তী বিবাদমান দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপের অনুসারীদের মধ্যে দীর্ঘ ৩ যুগ ধরে চলে আসছিল সামাজিক আধিপত্য বিস্তারের এক বিরামহীন লড়াই।
যার জের ধরে প্রায়ই এলাকায় দুই গ্রুপের সমর্থকদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে হতাহত হয়েছে উভয় পক্ষের অনেকে। হামলা ও মামলার ঘটনা ঘটেছে অনেকবার।
এক পক্ষ অপর পক্ষের উপরে বিভিন্ন সময়ে হামলা ও মামলার ঘটনায় গ্রামটিতে প্রায়ই উত্তেজনা বিরাজ করতো। বিভিন্ন সময়ে স্থানীয়ভাবে দুই পক্ষের সাথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আয়োজন করে শান্তি সমাবেশের। এসব সমাবেশের মাধ্যমে মানুষ একে- অপরের সাথে হিসাংত্বক মনোভাব বর্জন করে মিলে মিশে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় সোমবার (৮ এপ্রিল) বেলা সাড়ে দশটার দিকে হরিণাকুণ্ডু থানায় উভয় পক্ষের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গকে ডেকে তাদের মধ্যে বিরোধের নিষ্পত্তির জন্য জোরালো ভূমিকা পালন করেন হরিণাকুণ্ডু থানার ওসি জিয়াউর রহমান।
শান্তি বৈঠকে ফলসী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাড. বজলুর রহমান, সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুর রহমানসহ উভয় পক্ষের নেতৃস্থানীয় ২০-২৫ জন উপস্থিত ছিলেন। এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে চেয়ারম্যান অ্যাড বজলুর রহমান এবং সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুর রহমানসহ উভয় পক্ষের ২০ জন প্রতিনিধি ওসির আহবানে সাঁড়া দিয়ে লিখিত শান্তি চুক্তির অঙ্গিকার নামায় স্বাক্ষর করেন। অঙ্গিকার নামায় শান্তিচুক্তি লংঙ্ঘন করলে স্বাক্ষরকারী নেতৃবৃন্দকে অশান্তি সৃষ্টির অভিযোগে অভিযুক্ত করে সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার বৃহত্তর স্বার্থে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহনের বিষয়ে সতর্ক করা হয়। ওসি’র এমন মানবিক কার্যক্রমকে শান্তিপ্রিয় নাগরিক মহল অভিনন্দিত করেছে।
এঘটনায় চেয়ারম্যান অ্যাড. বজলুর রহমান বলেন, প্রথমত দীর্ঘদিনের সামাজিক অধিপত্য বিস্তার বিষয়ক বিরোধ নিষ্পত্তির উদ্যোগ গ্রহন করায় ওসি সাহেবকে ধন্যবাদ জানাই। তবে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে উভয়পক্ষের অনুসারীদের সহনশীল হয়ে পরমত সহিষ্ণুতার চর্চা করতে হবে। আমার পক্ষের অনুসারীগন অধিকতর শান্তিপ্রিয়, তারা কারু পায়ে পাড়া দিয়ে গন্ডগোল ফ্যাসাদ বাঁধাবে না বলে বিশ্বাস করি। আমি গোটা ফলসী ইউনিয়নকে একটি শান্তির জনপদ হিসেবে গড়ে তুলতে জনপ্রতিনিধি, সিভিল প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সকল শান্তিপ্রিয় নাগরিকদের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছি।
সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান বলেন, আনুমানিক ৩০ বছর ধরে কুলবাড়িয়া গ্রামে চলে আসা সামাজিক বিরোধ নিষ্পত্তি করে এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে ওসি সাহেবের ভুমিকা প্রশংসনীয়। আমরা আমাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখবো।, সেইসাথে সামাজিক বিরোধ স্থায়ীভাবে নিরশনে আমি এবং আমার সমর্থকেরা সর্বদা সচেষ্ট থাকবো।
হরিণাকুণ্ডু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জিয়াউর রহমান বলেন, আমি এই থানায় যোগদানের পর থেকেই দেখছি উপজেলা সদরের নিকটবর্তী কুলবাড়িয়া গ্রামে বর্তমান চেয়ারম্যান ও সাবেক চেয়ারম্যানের সমর্থকদের মধ্যে প্রায়ই ছোটখাটো বিষয়েও মাঝে মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করে। এ সামাজিক অস্থিরতা আমাকে ব্যথিত করেছে। সে কারণে সামাজিক আধিপত্য বিস্তার বিষয়ক বিরোধ নিষ্পত্তি করতে আমি কয়েকদফা সেখানে শান্তি সমাবেশের আয়োজন করেছি। উভয়পক্ষের শান্তিপ্রিয় নাগরিকদের শান্তির পক্ষে অবস্থান নিতে এবং অশান্তি সৃষ্টিকারীদের থেকে দূরে থাকতে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করেছি। অবশেষে দুই পক্ষের মধ্যে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রেখে এলাকার শান্তি ফিরিয়ে আনতে চলমান বিরোধ নিষ্পত্তি কল্পে অঙ্গিকারাবদ্ধ করার ব্যবস্থা করেছি। শুধু সামাজিক বিরোধ নয়, যে কোনো বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আমি সচেষ্ট রয়েছি। পুলিশের কাজ দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনে সদা সর্বদা সচেষ্ট থাকব। বাংলাদেশ পুলিশ সর্বদা শান্তি রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। হরিনাকুণ্ডুর প্রতিটি জনপদ হয়ে উঠুক শান্তিপ্রিয় মানুষের আবাসস্থল।